আমাদের কথাগুলো ঘুরে ফিরে আসলে মানুষেরই কথা। ‘কিছুটা বিজ্ঞান, পুরোটা মানুষ’ তাই মানুষের কথাই বলবে। মানুষ কেন ও কীভাবে এত নিত্যনতুন আবিষ্কার, এত-এত শিল্প সৃষ্টি করতে পারে। কেন শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। এ দাবির যথার্থতা আসলে কতটুকু। প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো আমরা। কিন্তু কীভাবে খুঁজবো? কি হবে সেই নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি? এখানেই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান শুধু নুতন প্রযুক্তি আবিষ্কারের হাতিয়ার নয়, বিজ্ঞান হলো বিশ্বকে জানার, প্রকৃতির নিয়মগুলোকে জানার, সত্য জানার সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। আমরা তাই বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং তার ক্রমবিকাশের নানা দিক নিয়ে কথা বলবো। জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর খুঁজবো আর নিজেকে জানার চেষ্টা করবো।
লালন ফকির বলেন ‘একবার আপনারে চিনতে পারলে, যাবে অচেনারে চেনা।’ বিজ্ঞান কি সবকিছু জেনে ফেলেছে, সব প্রশ্নের উত্তর কি বিজ্ঞান দিতে পেরেছে? এর উত্তরে বলতে হয়, পরিবর্তনশীল জগতে সত্যও পরিবর্তনশীল। তাই আজকে যেটা সত্য, কোনো একদিন সেই সত্যের বিলুপ্তি ঘটবে বা বিকাশ ঘটবে এবং নতুন সত্য উৎপত্তি লাভ করবে। বিজ্ঞান তখন নতুন সত্যকেও নতুন করে জানাবে বা জানানোর চেষ্টা করবে। এভাবে জানার কখনও শেষ হবে না। সত্যের পরিবর্তনশীলতার জন্য বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলোও পরিবর্তনশীল। তাই বিজ্ঞান কখনও অপরিবর্তনীয় কোনো কাঠামো নয়। আমরা সেই কথাগুলো বলবো। এসব বুঝতে বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো তো মানুষেরই কথা। যেকোন স্বাভাবিক চিন্তার অধিকারী মানুষই তা বুঝবে।
দূরদর্শী কবি জীবনানন্দ অনেক আগেই বুঝেছিলেন-
‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা।’
সমগ্র বিশ্বে এখন অদ্ভুত আঁধারই নেমে এসেছে যেন। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মানুষগুলো এ আঁধারে আকন্ঠ নিমজ্জিত। আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষা আমাদের এ আঁধার কাটিয়ে মুক্ত-স্বাভাবিক চিন্তার পথ তৈরি করে দিতে ততখানি সমর্থ্য হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে এত অরাজকতা, চারদিকে এত ধ্বংসযজ্ঞ। এ আঁধারে একমাত্র আলোর শিখা বিজ্ঞান। যে আলোর শিখা আমরা অনেকে দেখিনি, চিনিনি।